1. admin@protidinervor.com : admin :
শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪০ অপরাহ্ন

শহীদ রিয়াজের পরিবার: সহায়তার আশায় দিন গুনছে

অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫

“আমি কাল আন্দোলনে যাব। যদি মারা যাই, আমাকে মাফ করে দিও। আর সঙ্গে এনআইডি কার্ড নিয়ে যাব, যাতে মরদেহ তোমাদের কাছে পৌঁছানো সহজ হয়।”

এটাই ছিল ২৬ বছর বয়সী রিয়াজের শেষ কথা, যা তিনি স্ত্রী ফারজানা বেগমকে বলেছিলেন ৪ আগস্ট রাতে। পরদিন, ৫ আগস্ট, ঢাকা যাত্রাবাড়ীতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও শহীদ রিয়াজ :

গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র ও জনতার ব্যাপক আন্দোলন চলছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, সরকার দুর্নীতি, দমননীতি ও বাকস্বাধীনতা রোধের মাধ্যমে দেশকে একনায়কত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পাঁচ আগস্টের আন্দোলন ছিল সেই দীর্ঘ লড়াইয়ের একটি চূড়ান্ত পর্যায়, যেখানে ছাত্রদের একদফা দাবি ছিল সরকারের পদত্যাগ।

যাত্রাবাড়ীর মদিনা চত্বরে বসবাসকারী রিয়াজ পেশায় একজন রডমিস্ত্রী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। রিয়াজের রাজনৈতিক কোনো সক্রিয়তা ছিল না, তবে সরকারের দমননীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলনে সহমর্মিতা থেকে তিনি এতে অংশ নেন।

৪ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ীতে চলা বিক্ষোভে যোগ দেন তিনি। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে স্ত্রীকে জানান, আন্দোলনে যাওয়ার ইচ্ছে। ফারজানা বেগম তখন স্বামীর জীবন নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। কিন্তু তার নিষেধ সত্ত্বেও, রিয়াজ পরদিন সকালে কাজে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে যান, আর ফেরেননি।

গুলিবিদ্ধ মরদেহ ও শেষযাত্রা :

বিকেল চারটার দিকে ফেসবুকে একটি ছবি ভাইরাল হয়—যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে রিয়াজের নিথর দেহ। তার ভাই আরিফ ও অন্যান্য স্বজনরা খবর পেয়ে থানার সামনে ছুটে যান এবং তার মরদেহ উদ্ধার করেন।

চিকিৎসকের প্রতিবেদন অনুসারে, রিয়াজের শরীরে তিনটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়—একটি ডান হাঁটুতে, একটি বুকের ডান পাশে, আরেকটি কণ্ঠনালিতে।

পরদিন ৬ আগস্ট সকাল ১০টায় ভোলার দৌলতখানের চরখলিফা গ্রামে জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন, যারা ‘শহীদ রিয়াজ’ নামেই তাকে বিদায় জানান।

একটি পরিবার ধ্বংসের পথে :

স্বামী হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ফারজানা বেগম। আশ্রয় নিয়েছেন যাত্রাবাড়ীর ফুটপাতে সবজি বিক্রেতা বাবা ফরিদের কাছে। সাত বছর বয়সী মেয়ে বিবি ফাতেমা স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ে, আর চার বছরের ছোট মেয়ে ফারিহা মায়ের সঙ্গে দিন কাটায়।

রিয়াজের মৃত্যুর পর সরকারি কোনো সহায়তা না পেলেও, কিছু আর্থিক সহায়তা এসেছে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে।

বিচারের দাবি ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা :

রিয়াজের স্ত্রী এখন স্বামী হত্যার বিচার চান। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস পাননি, তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

 

তিনি বলেন, “আমার স্বামী অন্যায় কিছু করেননি। তিনি দেশের জন্য, জনগণের জন্য ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন। এখন আমি চাই, তার হত্যার বিচার হোক। আমার দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাদের জন্য অন্তত কিছু সহায়তা প্রয়োজন।”

 

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রিয়াজের মৃত্যু আরও একবার প্রশ্ন তুলেছে—এই দেশে সাধারণ নাগরিকদের জীবনের মূল্য কতটুকু?

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগোরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2025